![]()
নিউজ ডেস্কঃ
স্কুলের পাশে ছোট্ট নার্সারি। প্রতিদিনই যেতে আসতে দেখা হয়। নাম ‘নূর নার্সারি’। ছেলেবেলার প্রথম প্রেম সে-সুবাদেই হয়েছিলো গাছের সঙ্গে। ভালোলাগতো নানা প্রজাতির ফুলের গাছ। এর মধ্যেই তার নজর কাড়ে একটি ক্যাকটাস গাছ। টিফিনের টাকা থেকে সে গাছ নিয়ে যান নিজের ঘরে। সে থেকেই শুরু। সময়টা তখন ২০০০ সাল।
ক্যাকটাসের প্রতি ছোট্ট মনের সে ভালোবাসা দিনকে দিন বেড়েছেই। পথচলার দীর্ঘ ২৫ বছরে তার সংগ্রহে এখন সাড়ে ৪০০ প্রজাতি। এক বিশাল সমাহার। বলছি, সেই ক্যাকটাসপ্রেমী শিশু, এরপর কিশোর পেরোনো যুবকের কথা। তার নাম তৌহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।
বর্তমানে এক সহযোগীকে নিয়ে তিনি ক্যাকটাস বাগানকে বাণিজ্যিক রূপ দিলেও ভবিষ্যত লক্ষ্য পূরণে বিলুপ্ত ও বৈচিত্র্যময় গাছের সংগ্রহ বাড়াচ্ছেন। নিজ বাড়িতে বিশাল জায়গা নিয়ে তিনি ছোট্ট ছোট্ট করে গড়ে তুলছেন সে পার্কের স্বপ্ন। আর কর্ম এলাকা রাজশাহী নগরীতে একটি ছাদ ভাড়া নিয়ে পুরো ছাদজুড়ে ক্যাকটাসের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলছেন।
তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে একটি বাড়ির ছাদ ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে ক্যাকটাসের বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনটি আলাদা শেডে এখন রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্যাকটাস গাছ। তবে এটি তার নতুন নয়। ছোট্ট থেকেই তিনি ক্যাকটাস সংগ্রহ করছেন। তার বাড়িতে ক্যাকটাসের বিশাল সমাহার আছে।
তিনি বলেন, আমি ২০১১ সালে পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করি। এরপর চাকরির প্রস্তুতি নিই ঢাকায় গিয়ে। সেখানে গিয়ে কিছু সময় পর ক্যাকটাসের শূন্যতা অনুভব করতে থাকি। এরপর যেখানে থাকতাম সেখানেও ছোট্ট পরিসরে সংগ্রহ শুরু করি। সার্জেন্ট হিসেবে ডিএমপিতে চাকরি পাওয়ার পর সে সংগ্রহে আরও গতি পায়। তবে রাজশাহীর মতো এতো স্পেস ঢাকায় পাই নি।
তৌহিদুল বলেন, ক্যাকটাসের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ভবিষ্যতে নিজ উদ্যোগে একটি ক্যাকটাস পার্ক গড়ে তোলার স্বপ্নের পথে হাঁটছি। রাজশাহীতে ইসমাইল হোসেন নামের এক নার্সারি ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাকটাসের ছাদবাগান করেছি। সেখানে এখন প্রায় সাড়ে চারশো প্রজাতির ৫০ হাজারেরও বেশি ক্যাকটাস গাছ আছে। এগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। আমার সংগ্রহে এপিথেলান্থা মাইক্রোমেরিস ক্রিস্টাটা, উবেলম্যানিয়া পেকটিনিফেরা, অ্যাজটেকিয়াম রিটেরি, পিগমেওসিরাস বিবলির মতো দুর্লভ ক্যাকটাস আছে।
পুলিশের এই সার্জেন্ট বলেন, এই বাগান করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বড় কোন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় নি। তবে যেহেতু নিজস্ব জায়গা নেই, আর ছাদ ভাড়া নিয়ে বাগানগুলো গড়ে তুলি। সব বাড়ির মালিক এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে না।
রাজশাহীতে আসার পর প্রথম যে বাড়িতে উঠেছিলাম, সেখানে বাড়ির মালিক ছাদে বালু পড়া নিয়ে একটু উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। একারণে চিন্তাই পড়েছিলাম। স্থানীয় ক্যাকটাস প্রেমি অনেকের সঙ্গে এরইমধ্যে পরিচয় তৈরি হয়েছিলো অনলাইনের কল্যাণে। তাদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করার পর ইসমাইল ভাই তার পরিচিত এই বাড়ির মালিকের সন্ধান দেন। এই বাড়ির মালিক গাছ প্রেমি। অনেক আন্তরিক। এখন তেমন কোন সমস্যা নেই।
তৌহিদুল বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম ক্যাকটাসের প্রতি খুব পজেটিভ। আমার ছোট্ট দুই মেয়েও এ বাগানে আসলে আর যেতে চায় না। এছাড়াও অনেক দর্শনার্থী এ বাগান দেখতে আসেন। ক্যাকটাসগুলোর সৌন্দর্য যে কোন মানুষকেই আকৃষ্ট করতে পারে। সে দিক থেকে ক্যাকটাস বাগানের সম্ভাবনার জায়গাটা অনেক। এটাও একটা শিল্প। সুতরাং সৌন্দর্যপ্রেমি শৈল্পিক মনের মানুষদের ক্যাকটাস নিয়ে ভিন্ন একটি আবেগের জায়গাও তৈরি হয়েছে।



